কেন প্রতিদিন আপনার ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত জেনে নিন
ভিটামিন-সি যার রাসায়নিক নাম অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটি একটি জৈব অম্ল, যা শাকসবজি, ফল প্রভৃতিতে পাওয়া যায়। যার রাসায়নিক সংকেত C6H8O6 এটি সাদা দানাদার পদার্থ। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয় যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মত কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ ও ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মত কিছু জারিত (oxidized) যৌগ বিদ্যমান। অ্যাসকরবেট বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, এ দুয়ের যেকোন একটি দেহে প্রবেশ করলে প্রাকৃতিকভাবে দুটি পদার্থই প্রস্তুত হয়। এর কারণ, এরা pH এর মানের তারতম্যের সাথে একটি থেকে আরেকটিতে রূপান্তরিত হতে পারে। এটি কমপক্ষে আট রকমের উৎসেচক সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিভিন্ন কোলাজেন সংশ্লেষণ বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যেগুলোর অভাবে স্কার্ভি রোগের উপসর্গসমূহ দেখা দেয়।প্রাণীদের দেহে এই বিক্রিয়াসমূহ প্রধাণত ক্ষত-পূরণে ও কৈশিক রক্তনালী থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। অ্যাসকরবেট জারণজনিত পীড়ন (oxidative stress) রোধে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে
ভিটামিন সি এর উৎস
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য কাঁচা খেতে হয়, কারণ রান্না বা গরম করলে এদের পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন সি’র পরিমাণ হ্রাস পায়। একই ভাবে, দীর্ঘ দিন এদের মজুদ করে রাখা অথবা সূর্যালোক লাগানো উচিৎ নয়। এই ফল এবং সবজিগুলি তাজা এবং রান্না না করা অবস্থায় ধুয়ে নিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভাল।
- কমলা, লেবু, মিষ্টি লেবু, আঙুরের মত সাইট্রাস ফল ।
- স্ট্রবেরি, গুজবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরী এবং ক্র্যানবেরীর মত বেরি ।
- ফুটি এবং তরমুজ ও খরমুজ ।
- আনারস, পেয়ারা , আম, পেঁপে ।
- ব্রোকলি, লাল মরিচ, সবুজ মরিচ এবং ফুলকপির মত সবজি, টমেটো ।
- সবুজ শাক, পালং, বাঁধাকপি এবং শালগম ।
- মিষ্টি এবং সাদা আলু ।
- কিছু প্যাকেজ খাবার যেমন ডালে ভিটামিন সি থাকে ।
- এছাড়াও ক্যাপসুল, ট্যাবলেট এবং কৃত্রিম পরিপূরক হিসাবে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি-র ঘাটতি হলে যেসব সমস্যা হয় ।
১. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর অভাব রয়েছে, তারা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শরীরে শক্তি কমে যায়, অবসন্ন হয়ে পড়েন।
২. শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে বিরক্তিভাব দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
৩. যাদের শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হয়, তাদের হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।
৪. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে গিঁটে ব্যথা বা পেশিতে ব্যথার সমস্যা হয়।
৫. ভিটামিন-সি-এর অভাব হলে দেহে কালশিটে দাগ পড়ে।
৬. ভিটামিন-সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এর ঘাটতি দেখা দিলে এসব অংশে সমস্যা হতে পারে।
৭. ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়াও ভিটামিন-সি-এর ঘাটতির লক্ষণ।
৮. ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।
ভিটামিন সি -এর দৈনিক চাহিদা
ব্যক্তিগত উচ্চতা, ওজন এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরে নির্ভর করে ভিটামিন সি এর পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, মহিলাদের প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি সেবন করা উচিত, এবং, পুরুষদের পক্ষে পরিমাণটা ৯০ মিলিগ্রাম।মহিলাদের জন্য উপরোক্ত পরিমাণ ছাড়াও গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মা’দের অতিরিক্ত ভিটামিন সি দরকার। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন সি’র প্রয়োজনীয় দৈনিক মাত্রা 85 মিলিগ্রাম। স্তন্যদায়ী মা’দের 125 মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত ।
ভিটামিন সি একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা দেয়। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিরোধক যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।